মুহাম্মদ শফিকুর রহমান :
মোমিনের অন্যতম গুণ হলো তার ক্ষমা এবং উদারতা। ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা। ক্রোধ, রাগ, দাম্ভিকতা আল্লাহ পছন্দ করেন না। রাগকে যারা দমন করতে পারেন আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘যারা ক্রোধ দমন করে এবং অন্যদের ক্ষমা মাফ করে দেয়, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৪)।
প্রতিশোধ গ্রহণের সামর্থ্য আছে; কিন্তু প্রতিশোধ না নিয়ে মাফ করে দেওয়াই হলো প্রকৃত অর্থে ক্ষমা। মহানবী (সা.) এর জীবনে অসংখ্যা ঘটনা আছে যেগুলো আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। আমরা তা থেকে শিক্ষা নিতে পারি কীভাবে দয়ার নবী (সা.) ক্ষমা করে দিয়েছেন। অথচ প্রতিশোধ নেওয়ার সব ক্ষমতাই তার হাতে ছিল।
নবীজিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এক লোক এলো। কিন্তু তা ফাঁস হয়ে গেল। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল। এই লোক আপনাকে হত্যা করার মনস্থ করেছে, একথা শুনে লোকটি ভীত হয়ে অস্থির হয়ে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ভয় করো না। ভয় করো না। যদিও তুমি আমাকে হত্যা করার ইচ্ছে করেছ; কিন্তু তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাঁকে অবহিত করেছেন যে, তিনি তাকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন। রাসুল (সা.) তাকে ক্ষমা করে দিলেন অথচ সে তাকে হত্যা করার মনস্থ করেছিল!
হজরত আনাস (রা.) বলেন, একদিন এক ইহুদি নারী নবীজি (সা.) এর কাছে বিষমিশ্রিত বকরির ভুনা মাংস আহারের জন্য নিয়ে আসে। রাসুল (সা.) ওই মাংস খাওয়া শুরু করলেন, তার সঙ্গে আরও কিছু সাহাবিও খাওয়া শুরু করেছিলেন। একবার মুখে দিতেই নবী (সা.) সাহাবিদের খাওয়া বন্ধের নির্দেশ দিলেন এবং বললেন এ মাংসে বিষ মিশ্রিত রয়েছে। তৎক্ষণাৎ নবী (সা.) ইহুদি মহিলাকে ডেকে পাঠালেন। মহিলা আসার পর নবীজি (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কেন মাংসে বিষ মিশিয়েছ। সে বলল, কে বলেছে আপনাকে যে আমি বিষ মিশ্রণ করেছি? তিনি বললেন, আমার এই হাতে মাংসের টুকরাটি সাক্ষী দিচ্ছে। তখন ইহুদি মহিলা বিষয়টি স্বীকার করল এবং বলল আমি আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য বিষ মিশিয়েছি। এরপর নবীজি ওই মহিলাকে তার প্রাণনাশের চেষ্টা সত্ত্বেও কোনো শাস্তি দেননি বরং ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। একবার রাসুল (সা.) কে বলা হলো, আপনি মুশরিক বা মূর্তিপূজকদের জন্য অভিশাপ দিন। তিনি উত্তর দিলেন আমি জগতের রহমতসরূপ আগমন করেছি। অভিশাপস্বরূপ নয়। (মুসলিম)।
তায়েফবাসী মেরে নবী করিম (সা.) কে রক্তাক্ত করেছিল। তখনও দয়ার নবী (সা.) বদদোয়া করেননি। তিনি বললেন, আমি ওদের ধ্বংসের জন্য দোয়া কীরূপে করব? ওরা ইসলাম গ্রহণ না করলেও আশা করা যায় যে, তাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা অবশ্যই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। (মুসলিম)। ওহুদের যুদ্ধে হজরত হামজার কলিজা চিবিয়েছিলেন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা। রাসুল (সা.) তাকে ক্ষমা করে দেন। ক্ষমার অনুপম দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন আমাদের নবী করিম (সা.)। তাঁর আদর্শ ধারণ, ক্ষমার গুণাবলি অর্জন ব্যতীত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন অসম্ভব। নবীজির জীবনের এসব ঘটনা থেকে আমারা কী শিক্ষা পাই? আমাদের জন্য রাসুল (সা.) এর জীবন থেকে শিক্ষা হলো, যে কোনো অবস্থায় রাগ দমন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। লোকেরা যত শত্রুতাই করুক। আল্লাহর সাহায্যের প্রতি আশাবাদী হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। কেউ আমার প্রতি অন্যায় করলেও তার কাছ থেকে প্রতিশোধ না নেওয়া এবং তাকে মাফ করে দেওয়ার মধ্যেই মহৎ জীবন নিহিত রয়েছে।